গাযওয়া ই হিন্দ
সব পড়ে মন্তব্য করবেন।সম্প্রতি ব্যবসায়ের কাজে ভারত গেলাম। কি মনে করে স্ত্রী সন্তাদেরও সবাইকে নিয়েই গিয়েছিলাম। সবাই মিলে অনেক দিন কোথাও বেরাতে যাওয়া হয়না। দুইদিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে গেল। তারপর স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটু বেড়ানো হলো। প্রায় সপ্তাহ দুয়েক বিভিন্ন জায়গায় বেরানো হলো। এবার ফেরার পালা। হঠাৎ করেই স্ত্রী প্রস্তাব দিয়ে বসলো, চলোনা পাকিস্তান যাই। প্রথমে আমি আৎকে উঠলাম, বলে কি আমার সহধর্মিনী? অনেক বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করলাম না যাওয়ার জন্য। বুঝালাম আমরা বাংলাদেশীরা পাকিস্তান যাওয়া অর্থ ৭১ সালের বর্বরতার সমর্থন করা। মনে প্রাণে ঘৃণা করি যাদের, তাদের দেশে যাওয়া আমার কাছে নিজেকে প্রতারণা করার মত।
পাকিস্তান আমলে আমার আব্বার পোস্টিং ছিল মুলতান, সেখানেই জন্ম হয়েছিল আমাদের বড় ভাইয়ের। আব্বা ৭১ সালে চাকরি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। তার পর আমাদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে আর কাউকেই পাকিস্তান যান নাই। তাই আমি কোন ভাবেই পাকিস্তান যেতে রাজী হলাম না। কি স্ত্রী নাছোড়বান্দা, যাবেই। আরও বুঝালাম আমাদের পাসপোর্টে পাকিস্তান যাওয়ার রেকর্ড থাকবে, যা পরবর্তীতে অন্য কোন দেশে যেতে চাইলে ঝামেলা হবে। সরকার ঝামেলা করবে, কেন পাকিস্তান গেলাম। তবুও বউ কথা শুনলোই না, বলে শত্রু হোক আর যাই হোক এত কাছ থেকে পাকিস্তান না দেখে দেশে যাব না। প্রয়োজনে সে আমাকে ছাড়াই পাকিস্তান যেতে চায়।
সারা জীবন যাদের নাপাক বলে গালি দিলাম তাদের দেশে যাব খুব কষ্ট হচ্ছিল ভাবতে।
সকল দিধা দন্দ ঝেড়ে ফেলে পরের দিন সীমান্তে হাজির। ভেবেছিলাম ভিসা দেওয়ার সময় কত কি শুনতে যে হবে? কেমন করে নাপাকিদের বাজে কথা সহ্য করবো?
কিন্তু আমার ধারনাকে ভুল প্রমাণ করে, ভারতের ভিসার জন্য যত সময় লাগে তার পাঁচ ভাগের একভাগ সময়ও লাগলো না। যে আমি মাসে একবার হলেও ভারত যায়, সেই আমাকে কত ঝামেলা পোহাতে হয় ভারতীয় ভিসা পেতে। অথচ পাকিস্তানী কাস্টমস আমাকে তেমন কোন ঝামেলায় ফেললো না। একটু ধাক্কা খেলাম ওদের আন্তরিক ব্যবহারে।
যা হোক গেলাম পাকিস্তানে। ভেবেছিলাম পদে পদে অসহযোগিতা পাব। কিন্তু আমার ধারনা এবারও ভুল প্রমাণিত হলো। সত্যি আন্তরিকতায় ওরা ভারত থেকে যোজন যোজন ভাল। বাংলাদেশীদেরকে যথেষ্ঠ শ্রদ্ধা করে। আমাদের যুবক শ্রেণীরা পাকিস্তানকে গালি না দিয়ে কথা বলি না, কিন্তু ওদের যুবকদের দেখলাম বাংলাদেশের প্রতি অন্যরকম এক মহব্বত। যা ভারতীয় মুসলিম বা অন্য ধর্মের নাগরিকদেরকাছে পায় নি।
যাক মূল কথায় আসি। পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরলাম বটে, কিন্তু সঙ্গে করে নিয়ে আসলাম এক চিন্তা দায়ক সংবাদ। যা আমরা এত দিন জানতাম না। তা হলো গাজওয়াতুল হিন্দ। শব্দটি আমি পাকিস্তানে নতুন শুনলাম। এর আগে আমি কোন দিন শুনি নাই।
ইসলামী জ্ঞান আমার সেই রকম বেশী না হলেও খারাপ না। আরবীতে কুরআন তিলাওয়াত পারি। অনেক হাদীস মুখস্থ করেছিলাম। নামাজ রোজা করি ছোট বেলা থেকেই। শুক্রবারে জুম্মায় যায় দুপুর ১২ টার আগেই। গভীর মনোযোগে ঈমাম সাহেবর খুতবা শুনে জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। সাধারণ ভাবে বললে বেশী বলা হয়ে যাবে, নামাজ ক্বাজা হয়না বললেই চলে। এমন কি ভারতে গেলেও নামাজ মিস করি না।
বউকে জিজ্ঞাসা করলাম গাজওয়াতুল হিন্দ কি, বউ বললো সে যানে না। কয়েকজন বন্ধুর কাছে জিজ্ঞাসা করলে ওরা আকাশ থেকে পরলো বলে মনে হলো। এক বন্ধু বললো ফেসবুকে না কি এমন একটা স্ট্যাটাস দেখেছে। কিন্তু পড়া হয়নি।
গুগলে সার্স দিলাম প্রথমে ইংরেজিতে। শত শত পেজ ওপেন। আমার মাথা খারাপ হওয়ার দশা। ভাবতে লাগলাম আমার ঘরের খবর আমি জানি না অথচ অন্য সবাই জানে। ফেসবুকে একটি পোস্ট পেলাম এই বিষয়ে। রেফারেন্স দেখে সেই সকল ওয়েব সাইটে ঢুকলাম। বাংলাও প্রচুর এই বিষয়ে প্রবন্ধ পেলাম।
অনেক কষ্ট পেলাম, ধিক্কার দিলাম নিজেকে কিছুই না জানার কারণে। কেন আমি জানি না? আমরা এত হাদিস বা ইসলামী বই পড়ি তার ভিতরে এই বিষয়ে কোন কিছু নেই। বুঝলাম আমাদের আসলে সুপরিকল্পিত ভাবে অন্ধ করে রাখা হয়েছে। এই প্রথম কেন যেন মনে ভারতের প্রতি একটা রাগ জন্ম নিতে লাগলো। দিল্লী শাহী মসজিদেও আমি জুম্মার নামাজ পরেছি অনেকবার। খুতবাও শুনেছি। কিন্তু তারাও এই ব্যাপারে চুপ আছে কেন? কেন আমাদের এই বিষয়ে জ্ঞান নেই, কারণ আমাদের বেশীর ভাগ ঈমাম লেখাপড়া করে ভারতে। আর ভারতীয় মূসলমানেরা এই বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর জানলেও তারা চেপে যায়। কারণ তারা মনে করে এই যুদ্ধ বুঝি ভারতের সাথে পাকিস্তানের। আর যেহেতু তারা ভারতে বাস করে, সুতরাং মাতৃভূমি হিসাবে ভারতের প্রতি তাদের অনেক দায়িত্ব। তাই গাজওয়াতুল হিন্দের যুদ্ধ মানে হিন্দু মুসলিম যুদ্ধ নয়, পাক ভারত যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের মনে এই ইচ্ছা তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে থাকবে। যার প্রভাব পরেছে বাংলাদেশে।
এই প্রসঙ্গে আমি যে মসজিদে রেগূলার নামাজ পড়ি সেই মসজিদের ঈমামকে বললাম। উনি বললেন এটা নিয়ে অযথা চিন্তা করার দরকার নেই। এটা পাক ভার যুদ্ধ। আমি থ হয়ে গেলাম তার কথা শুনে। পরে খোজ নিয়ে জানলাম উনি দেওবন্দের ছাত্র।
আর যে কারণে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু মুসলিম যুদ্ধের কোন খবরই জানি না।
তাই সকল ফেসবুক এক্টিভিষ্টদের কাছে অনুরোধ আপনারা এই বিষয়ে জোড় প্রচার চালান।
বাংলাদেশের প্রত্যেক মুসলিমের এই যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে। আর না জানলে সমুহ বিপদের মধ্যে পতিত হতে চলছি। হিন্দুরা আমাদের বন্ধু নয়, শত্রু।
সবাই শেয়ার করে জানতে সুযোগ করে দিন। কপি পেস্ট করেও ছড়িয়ে দিন।




No comments